হিমু – হুমায়ূন আহমেদ
প্রসঙ্গ হিমু
……………………………………………
হিমু আমার প্রিয় চরিত্রের একটি। যখন হিমুকে নিয়ে কিছু লিখি -নিজেকেই হিমু মনে হয়, এক ধরনের ঘোর অনুভব করি। এই ব্যাপারটা অন্য কোনো লেখার সময় তেমন করে ঘটে না। হিমুকে নিয়ে আমার প্রথম লেখা ময়ূরাক্ষি। ময়ূরাক্ষি লেখার সময় ব্যাপারটা প্রখম লক্ষ্য করি। দ্বিতীয়বার লিখলাম দরজার ওপাশে । তখনো একই ব্যাপার। কেন এরকম হয়? মানুষ হিসেবে আমি যুক্তিবাদী। হিমুর যুক্তিহীন, রহস্যময় জগৎ একজন যুক্তিবাদীকে কেন আকর্ষণ করবে? আমার জানা নেই। যদি কখনো জানতে পারি-পাঠকদের জানাবো।
হুমায়ুন আহমেদ
এলিফ্যান্ট রোড
রিভিও
হুমায়ূন আহমেদ পড়েছেন আর হিমু পড়েননি এমন পাঠক খুঁজে পাওয়া যাবে না । কিংবদন্তী কথাসাহিত্যিকের কোন সৃষ্টিকে যদি একক ভাবে মনে রাখতে হয় তবে সেটা হিমু । হৃদয়গ্রাহী হিমুকে কোনভাবেই উপেক্ষা করার সুযোগ নেই । গল্পের জাদুকর তাঁর জাদুকরী ছোঁয়ার ষোল আনা ঢেলে দিয়ে ‘হিমু’ লিখেছেন ।
হিমু কে ? কী তার ক্ষমতা ? আদৌ কি বাস্তবে কোন হিমু আছে ? নাকি লেখকের খেয়ালী মনের কল্পনা ? হিমু, রহস্য মানব । যে কিনা লজিকের ধার ধারে না । যাকে নিয়ে তার চারপাশের মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরী হয় । কারো কাছে হিমু অতিন্দ্রীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি , মহাপুরুষ কিংবা সাধু সন্ন্যাসী গোত্রীয় যার প্রতিটি ভবিষ্যৎবাণী বাস্তবে রূপ নেয় । আবার কারো কাছে হিমু হল বাউন্ডুলে এক স্বত্তা । যার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা নেই । চারপাশের মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলাই যার কাজ । কেউ হিমুকে খুব বেশী ভালোবাসে , অন্ধের মত ভক্তি করে আবার কারো কাছে হিমু বিরক্তিকর প্রাণি বিশেষ । হিমু এমন এক স্বত্তা যে একই সঙ্গে চেনা আবার একেবারেই অচেনা । যে কখনই সত্য কথা বলে না আবার মিথ্যা কথা বলে না । প্রচন্ড ভালোবাসা উপেক্ষা করার মত ঐশ্বরিক ক্ষমতা যার আছে । যে তার বাবার স্বপ্ন অর্থাৎ সন্তানকে মহাপুরুষ বানানোর চেষ্টা পুরোপরি ব্যর্থ করেনি আবার সফলও করেনি । মানুষের উপকার করেই যে সটকে পড়ে , ধন্যবাদ দেওয়ার সুযোগটা যে দেয় না । একেকজনের কাছে হিমু একেক রকম । আমার কাছে হিমু এমন এক রহস্যমানব যার চারপাশের রহস্যের জাল গুটিয়ে ফেলা যাবে না ।
যেখানে হিমুর স্রষ্টা হিমুর যুক্তিহীন রহস্যময় জগতকে নিজেই উন্মোচন করতে পারেন নি ,সেখানে আমার মত ক্ষুদ্র পাঠক কীভাবে পারবে ? কিছু চরিত্র থাক না রহস্যের আড়ালে , ক্ষতি কী ?
বই-হিমু
লেখক-হুমায়ূন আহমেদ
ধরন-উপন্যাস
পৃষ্ঠা-৭৪
মূল্য-১২০
প্রতীক প্রকাশনা
……
কি নাম বললেন আপনার, হিমু?
জ্বি হিমু
হিম থেকে হিমু
জ্বি না হিমালয় থেকে হিমু। আমার ভাল নাম হিমালয়।
বাংলাসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ । আর তার তৈরি অন্যতম একটা চরিত্র হলো হিমু। হিমু এক রহস্য মানব। যাকে পাঠকের পক্ষে কখনো উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। ময়ূরাক্ষীর মধ্য দিয়ে লেখক হিমু কে আমাদের মাঝে এনেছিলেন। যে পুরো মিসির আলীর উল্টো। কোন যুক্তির ধার ধারে না । সে নিজের খেয়াল মতো অবস্থান করে। নিজের খুশিতে ঘোরাফেরা করে। নিজের মতোই তার পথ চলা। যেখানে কোন সঙ্গী কে প্রয়োজনবোধ করে না। আমরা হুমায়ূন ভক্ত রা ইচ্ছা করেই তার পথের সঙ্গী হতে চাই। কেন না তাতে আমাদের ভালো লাগে।তার একটু খানি প্রশ্রয়ে নিজেদেরকে আমরা খুব সৌভাগ্যবান মনে করি।
উপন্যাসের প্রথম দিকে তাকে এষা নামে একটি মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখা যায়। হিমুর ভাষায়, সে তাদের কোন একটা সাহায্য করায়, তারা ঠিক এর প্রতিদান না দিতে পেরে কিছু টা সংকোচ বোধ করছে। কি সেই উপকার পাঠক না হয় বইয়ের পাতায় দেখবেন। তাকে প্রশ্ন করা হলো, তার কাজ কি? হিমু খুব সাবলীল ভাবে উত্তর দিলো, সে একজন পরিব্রাজক। হাটা তার কাজ। উত্তর শুনে এষার কপালে ভাজ পড়লো।
বসার ঘরে বসে কিছু একটা ভেবে বের করে ফেলল, বাড়িতে চা পাতা নেই। আর তাই সে এষা কে প্রশ্ন করলো।কথা শুনে এষার কপালের ভাজ বিস্তৃত হলো। হিমু বসে বসে ঘরের চিত্র গুলো পুরো তার চোখে ভাসাতে থাকলো। এষা পড়াতে যেতে চাইলেও সে বসে থাকল। এষা তখন টিভি ছেড়ে দিলো। কিন্তু টিভিতে কিছু আসছিলো না। তবুও হিমু খুব আগ্রহ নিয়ে টিভি দেখতে থাকলো।
যাই হউক অনেকের কাছে হিমু ক্ষমতাধর ব্যক্তি , মহাপুরুষ কিংবা সাধু সন্ন্যাসী টাইপের যারা ভবিষ্যৎবাণী করতে পারে। ।কিন্তু কারো কাছে হিমু একে বারে বাউন্ডুলে ফালতু টাইপ । হিমুর সব থেকে প্রিয় কাজ চারপাশের মানুষকে বিভ্রান্তিত করা।
উপন্যাসে অনেক চরিত্র তাকে খুব বেশী ভালোবাসে এমনকি ভক্তি করে অন্ধের মতো।তার মধ্যে ইয়াদ একজন। আবার কারো কাছে হিমু বিরক্তিকর একটা জিনিস। তেমন একজন হলেন নীতু। এমন কি আমার আম্মুর কাছেও। মেয়ের বই গুলো তো দেখতে পারেই না। সেই সাথে লেখক এবং চরিত্র গুলোরও গুষ্ঠী উদ্ধার করতে মহিলা এক পায়ে খাড়া।
হিমু চরিত্র টা ঘোলা। তাকে কখনো বুঝা যায়, আবার কখনো আয়ত্বের একেবারে বাইরে থাকে । তাকে বিশ্বাস করলেও ঠকতে হয় আবার অবিশ্বাস করেও পারা যায় না। তার কথা গুলো মূলত সত্যও না আবার মিথ্যাও না। তার একটা অমানুষিক গুন হলো মানুষের প্রচন্ড ভালোবাসা উপেক্ষা করা।যা সাধারন মানুষের মাঝে নেই। এদিক থেকে বলতে গেলে মহাপুরুষ পর্যায়ে। তার বাবার স্বপ্ন ছিলো তাকে মহাপুরুষ বানানো। তার জন্য জন্মের পর থেকে তিনি বহুৎ চেষ্টা করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে হিমু একেবারে মহাপুরুষ এর কাছাকাছি। এবং সে দিক দিয়ে তার বাবার ইচ্ছা পুরোপরি ব্যর্থ হয়নি। কিন্তু আবার সফলও হয়নি।
সকল পাঠকের কাছে হিমু এক রহস্যময় চরিত্র। যা কোন ভেদ করা সম্ভব নয়। সে চলবে তার আপন গতিতে।