পারাপার – হুমায়ূন আহমেদ

পারাপার – হুমায়ূন আহমেদ

পারাপার – হুমায়ূন আহমেদ
কাল সারারাত ঘুম হয় নি। ঘুম না হবার কোনো কারণ ছিল না। কারণ ছাড়াই এই পৃথিবীতে অনেক কিছু ঘটে। দিনের আলো ফোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ঘুমোতে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে চোখভর্তি ঘুম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। ঘুম ভাঙল স্বপ্ন দেখে। আমার বাবাকে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি আমার গা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলছেন, এই হিমু, হিমু, ওঠ। তাড়াতাড়ি ওঠ। ভুমিকম্প হচ্ছে। ধরণী কাঁপছে। আমি ঘুমের মধ্যেই বললাম, আহ, কেন বিরক্ত করছ? বাবা ভরাট গলায় বললেন, পাকৃতিক দুর্যোগের মতো মজার ব্যাপার আর হয় না। ভেরি ইন্টারেষ্টিং। এই সময় চোখকান খোলা রাখতে হয়। তুই বেকুবের মতো শুয়ে আছিস। ঘুমোতে দাও বাবা। তোর ঘুমোলে চলবে না। মহাপুরুষদের সবকিছু জয় করতে হয়। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম। ঘুম হচ্ছে দ্বিতীয় মৃত্যু। সাধারণ মানুষ ঘুমায়-অসাধারণরা জেগে থাকে।

রিভিউ ১

বই-পারাপার
লেখক-হুমায়ূন আহমেদ
ধরন-উপন্যস
পৃষ্ঠা-৭৫
অন্যপ্রকাশ
….
পারাপার শুরু হয়েছে ঘুঘুর ডাক কেন্দ্র করে।
মাইক্রোবাসের পর্দা সরিয়ে একটা পান খাওয়া মুখের ভদ্র মহিলা হিমুকে প্রশ্ন করলো, এই তুই হিমু না?
হিমু কিন্তু তাকে চিনতে পারে নি, তাই চুপ করে রইলো।

তিনি জোর করে হিমু কে রিকশা থেকে নামিয়ে নিয়ে গেলেন, তার মাইক্রোবাসে । ভদ্র মহিলার সাথে এক মেয়ে তার নাম খুকি।হিমুর মনে হলো এই মেয়ে মানুষ না, এ হলো হুর।
অনেক ক্ষন চলে গেলেও, হিমু এই মহিলা কে চিনতে পারলো না। মাঝ পথে হিমু নেমে গেল। যদিও মহিলা অনুনয় করছিল। তবুও হিমু তো সব উপেক্ষা করে চলে আসতে পারে।

সে যাবে ইয়াকুব আলীর কাছে। তিনি তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। লোকটি হুলুস্তুল ধরনের বড় লোক। তার সাথে দেখা করতে অনেক কসরৎ করতে হলো। শেষ পর্যন্ত তার সাথে দেখা হলো। তার মনে হলো হসপিটালের কেবিনে পা রাখতে যাচ্ছে। ইয়াকুব আলী হিমু কে যেকারনে তলব করেছেন। হিমু সে কাজটাই ভালো পারে।

হিমু সম্পর্কিত বই গুলো যেমন সে টেনে নিয়ে যায় নিজের ক্ষমতায়। এই গল্পটাকেও সে নিয়ে নিয়েছে নিজের আয়ত্বে।
হিমু তো হিমুই। তার বইগুলোতে এমন কিছু থাকে, তা পড়ে শেষ করার পর পাঠকও তার মতোই হতে চায়। হিমুর যে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ব্যাপার টা আমাকে ভাবায় তার একটা সচিত্র আছে এই গল্পে।

হিমু সিরিজ শেষ করেছি বছর তিনেক আগে। পুরনো হয়ে গিয়েছিলো আমার কাছে সব। কিন্তু এত বড় একটা সমগ্র যখন চোখের সামনে মেলে ধরলাম। তার প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন আমাকে সব মনে করিয়ে দিলো।

পারাপারা শেষ করার পর প্রথম আমি ঘুঘু পাখি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করি। আমার আম্মু তো এসব আহলাদী একদম পছন্দ করেন না। এটা বলতে গিয়ে আমি আরো রামধমক খেয়েছিলাম। ভরসা ছিলো ভাইয়া। কিন্তু তার তো সময় নাই। এক সময় আমি ঘুঘু পাখির কথা ভুলে গেলাম।

আজ আবার মনে হলো। আম্মুকে রাগানোর জন্য বললাম কাল ভোরে উঠেই পার্কের চিড়িয়া খানায় গিয়ে খোজ নিব, ঘুঘু পাখি আছে কিনা, দেখে আসব। এত বড় একটা মেয়ে ঘুঘু পাখি দেখেনি কেউ শুনলে হাসবে। আম্মু কিছু বললেন না। হয়তো আগের রাগের প্রোকোপ টা এখন আর নাই।

হিমু বা হুমায়ূন পড়েছি অনেকদিন পর। কেন জানি একটা শুন্যতা কাজ করে। আর কোন হিমুসিরিজ পাবো না। কোথাও থাকবে না হিমুর সেই অপেক্ষার রূপা। আজ কয়দিন যাবত বই গুলি উল্টিয়ে গলা এখন ভারী লাগছে। আমি কি কষ্ট পাচ্ছি! আচ্ছা ইচ্ছা করলেই কি এই কষ্ট গুলো আমি গিলে ফেলতে পারবো? কি জানি আমি তো হিমুর মতো মহাপুরুষ নই। নিজের উপর আমার কোন নিয়ন্ত্রন নেই। আমি তার মতো এতো আবেগ হীন নই।হলে এমন হতো না।

পারাপার এর শেষ পৃষ্ঠায় হিমু রূপাকে প্রশ্ন করলো সে কাদঁছে কেন? রূপা তাকে ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল জানি না কেন কাঁদছি। গাড়ির জানালার ফাঁক দিয়ে এক টুকরো জোছনা এসে পড়েছে রূপার কোলে।জোছনার সমস্যা হলো শুধু বিভ্রম তৈরি করে।এটাই সত্যি। পৃথিবীর সব নারীই রূপা এবং সব পুরুষই হিমু।

রিভিউ ২

আমার খুব ঘুঘুর ডাক শুনতে ইচ্ছে করছে।মন বলছে কোন এক স্নিগ্ধ সকালে বট গাছের নিচে বসে ঘুঘুর ডাক শুনবো আর হালকা বাতাস এসে ছুঁয়ে দিবে হৃদয়কে।”পারাপার” পড়ার পর থেকেই আমার এই ইচ্ছাটা হয়েছে।হিমু মানেই আমার কাছে ভাললাগা।বইটি হিমুকে নিয়ে।ভালমানুষের সন্ধানে বেড়িয়ে পরা হিমু কত বিচিত্র ঘটনায় না সামনে তুলে আনে।হিমুর বইগুলোতে এমন কিছু কথা থাকে যেগুলো পড়ার পর মনে হয় কোন একদিন আমিও সারা শহর ঘুরবো, মধ্যদুপুরে গাছের নিচে বসে ঘুমুবো, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করবো।হিমুর আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আমাকে সবসময় অবাক করিয়ে দেয় তার প্রতি ভাললাগাটা বাড়িয়ে দেয়।হিমুর ছেলে মানুষীর পিছনে যে একটা সুন্দর মনুষ্যত্ব লুকিয়ে আছে এটা যে বুঝতে পারে সেই শুধু হিমুকে ভালবাসতে পারে।একটি কুকুরছানার জীবন রক্ষার্থে তাকে কিনে নেওয়ার কথা কি কেউ ভাবে? সবাই সখ করেই কুকুর কিনে।হিমুরা সখ নয় তাদের বেঁচে থাকার আকুলতাকে অনুভব করে যেকোন মূল্য কিনে নিতে পারে।বইটির এই অংশটি পড়ে খুব ভাল লেগেছিল।এই বই এ রূপার কথাও উল্লেখ আছে।শেষে মনে হয়েছিল হিমু আর রূপা বাকিসময়টা যেন একসাথেই জোছনার আলোয় আলোকিত হয়।
‘পারাপার’ বইটি পড়েছি অনেক আগে। নতুন করে আবার পড়লাম।হুমায়ূন আহমেদ কে অনেক মিস করছি।হিমু রূপার শেষ পরিণতি কি হতো খুব জানতে ইচ্ছা করছে। রূপার থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখা হিমু কী সবসময় লুকিয়েই বেড়াত!

নীল শাড়িটা ভাঁজে ভাঁজে ছিড়ে গিয়েছে প্রায়! হলুদ পাঞ্জাবিটায় বড় করে নীল সুতোই লিখে দেওয়া হিমু নামটা কেমন ফ্যাকাসে লাগছে 🙁 ভেবেছিলাম হিমু যখন মধ্যদুপুরে কিংবা সোডিয়ামের হলুদ আলোয় হেঁটে যাবে তখন পাঞ্জাবির নীল সুতোর লেখাটা তাকে মনে করিয়ে দিবে রুপা নামের কেউ একজন বিকেল বেলায় নীল শাড়িটা পড়ে ছাদে উঠে অপেক্ষায় চেয়ে থাকে।সে ভালমত জানে হিমু আসবেনা তবুও যে তার এই অপেক্ষাটা তাকে এনে দেয় একঝাক জোনাকিপোকার আলোর মত শান্তি। সবকিছু আজ মলিন হয়ে পরে আছে! হিমুর পথচলা যে থমকে গিয়েছে,রুপার আর নীল শাড়িটা পরা হয়না! সবকিছুর পূর্ণতার জন্য কলমের কালি দিয়ে কাগজ ভর্তি করার মানুষটা আজ অনেকদূরে চলে গিয়েছে। নতুন বই এর অপেক্ষা যে আর করা হয়না।তবুও আপনি বেঁচে আছেন অজস্র তরুণ সমাজের মাঝে।হুমায়ূন আহমেদ এর প্রতি ভালবাসা রেখে মনের কথাটা ব্যক্ত করলাম।

বইয়ের নামঃ পারাপার
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশনীঃ অন্বেষা প্রকাশন
সিরিজঃ হিমু
প্রকাশকালঃ ২০০৭
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১৪
সাইজঃ ১.৪৫ এমবি
ফরম্যাটঃ PDF
টেক্স ফরম্যাটঃ HD Scanned
রেজুলেশনঃ ৬০০ DPI
বইয়ের ধরণঃ উপন্যাস

Download Pdf

Similar titles

বাঘরাজের অভিযান – হেমেন্দ্রকুমার রায়
চারদিক যখন অন্ধকার – অনীশ দেব
বক্সার রতন – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
বাতিঘর – বুদ্ধদেব গুহ
ফুড কনফারেন্স – আবুল মনসুর আহমেদ
বউ ঠাকুরানীর হাট – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
অন্ধকারে আলোর রেখা – সমরেশ বসু
আট কুঠুরি নয় দরজা – সমরেশ মজুমদার
ঝাউ বাংলোর রহস্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
বাঁশিওয়ালা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
নোট বই থেকে – শংকর
বকুল গন্ধে বন্যা এলো – নিহার রঞ্জন গুপ্ত

Leave a comment

Name *
Add a display name
Email *
Your email address will not be published
Website